আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা | ২০ পয়েন্ট

SHARE:

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা | ২০ পয়েন্ট

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুর আজকে আমরা হাজির হয়েছি খুবই গুরুপ্তপূর্ণ  “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা” নিয়ে। রচনাটি ২০ টি পয়েন্টে ২৫০০+ শব্দে , প্রয়োজনীয় উক্তি ও কবিতা সহকারে লেখা হয়েছে। রচনাটি এসএসসি , এচইএসসি সহ যেকোনো পরীক্ষার জন্য তোমাদের অনেক সাহায্য করবে।      

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস 

বা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার গুরুত্ব 

বা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এবং একুশে রচনা 

ভূমিকা

প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি, বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিনটি কেবল এক দিনের উৎসব নয়, বরং বিশ্বের সব জাতিগোষ্ঠীর ভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ পুনর্নবীকরণের দিন। মাতৃভাষা হলো আমাদের সত্তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেটি আমাদের আত্মপরিচয়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বহন করে। মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের গুরুত্ব অপরিসীম, কেননা এটি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার বৈচিত্র্যকে সম্মান জানায় এবং প্রতিটি জাতিকে তাদের নিজস্ব ভাষা রক্ষা ও লালন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। তাই তো বলা হয়,

 ’বিনে স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা’


ভাষা কোনো জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ের নিদর্শন। প্রতিটি জাতির নিজস্ব ভাষা থাকা মানেই তার নিজস্ব সত্তা টিকে থাকা। মাতৃভাষা হারিয়ে গেলে, একটি জাতি তার মূল্যবোধ, তার গৌরবময় অতীত, তার স্বপ্ন সবই হারিয়ে ফেলে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রতিটি ভাষার অস্তিত্ব রক্ষা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আর এই রক্ষা কার্যক্রমে আমরা কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারি।

মাতৃভাষার স্বরূপ 

মাতৃভাষা, শুধু কথাবার্তার মাধ্যমই নয়, এটি একটি জাতির অন্তরাত্মার প্রতিধ্বনি। এটি সেই ভাষা, যা আমরা মায়ের কোলে শুনি, প্রথম কথা বলি, জগতকে অনুভব করি। প্রতিটি জাতিরই নিজস্ব মাতৃভাষা থাকে, যা তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও আত্মপরিচয় বহন করে।

মাতৃভাষা আমাদের মনের গভীরতম স্তরে গিয়ে পৌঁছায়, নিজের ভাষায় চিন্তা করা, অনুভব করা আমাদের আত্মবিশ্বাস ও ঐক্যবদ্ধতা বাড়ায়। মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সংস্কৃতির ঐতিহ্য, গল্প, গান, কবিতা বয়ে চলে। এটি জাতির ঐতিহ্যকে জীবিত রাখে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্দেশনা বয়ে নিয়ে যায়। 

আমাদের মাতৃভাষা বাংল। বাংলা শুধু বাংলাদেশেরই নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, ঝাড়খন্ড, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং নেপালের কিছু অংশে প্রচলিত। পৃথিবীজুড়ে ২৬ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে, যা এটিকে বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বাধিক কথিত ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি

ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেমের প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক  সংগঠন তমদ্দুন মজলিশের হাত ধরে। তমদ্দুন মজলিশ একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে যা বাংলা ভাষাকে ভাববিনিময় ও অফিস আদালতের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে জোরালো দাবি তুলে ধরেন। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজিকে সরকারি ভাষা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। গণপরিষদে পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা হিসেবে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব করলে তা আগ্রাহ্য করা হয়। এর প্রতিবাদে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।  ২১ মার্চ ১৯৪৮ সালে রেসকোর্স ময়দানে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক নাগরিক সংবর্ধনায় ঘোষণা করেন যে

 ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ 


সমাবেশস্থলে উপস্থিত ছাত্রনেতারা ও জনতা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে।

২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি আবার সেই একই দাবি তুলেন।  জিন্নাহর এই বক্তব্যে ছাত্ররা দাড়িয়ে ‘‘নো নো’’ বলে প্রতিবাদ করে। জিন্নাহর এই বাংলাবিরোধী অবস্থানের ফলে পূর্বে পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলন পটভূমি আরও জোরালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।

ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস 

ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা হয় ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দীনের ভাষণের মাধ্যমে। এদিন পল্টন ময়দানের এক জনসভায় তিনি জিন্নাহর কথাই পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু’। নাজিমুদ্দীনের বক্তৃতার প্রতিবাদে ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। সেদিন ছাত্র-নেত্রীরা আমতলায় সমবেত হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী হরতাল পালনের সিদ্দান্ত নেয়।  নব গঠিত ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ’ ২১ ফেব্রুয়ারি  হরতালের, সমাবেশ ও মিছিলের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু আন্দোলন ভণ্ডুল করতে সরকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় এক মাসের জন্য সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। 

২১ ফেব্রুয়ারি  পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী  বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হয় এবং তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে।  ছাত্ররা ছোট ছোট দলে মিছিল নিয়ে ‘রাষ্টভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্য করে। পুলিশ বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসরমাণ মিছিলের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে আব্দুল জব্বার  রফিক উদ্দিন আহমেদ ও আবুল বরকত নিহত হয়। আল মাহমুদের কবিতায়,

 ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ

 দুপুর বেলার অক্ত 

বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ? 

বরকতের রক্ত।


ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগণ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে।  উপায়ন্তর না দেখে ২২ ফেব্রুয়ারি  নুরুল আমিন সরকার  তড়িঘড়ি করে আইন পরিষদ বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আনেন এবং  প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। সবিশেষে, ১৯৫৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান জাতীয়  সংসদ বাংলা এবং  উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধান পাস করে। ওই বছরের ৩ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানকারী পাকিস্তানের সংবিধান কার্যকর ।

মাতৃভাষা দিবস পালনের ইতিহাস 

১৯৫৩ সালের শহীদ দিবস উদযাপনের মাধ্যমে একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস পালন, বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।  এদিন কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। খুব ভোরে, নগ্নপায়ে প্রভাতফেরি হলো একুশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আরেকটি অনন্য নিদর্শন। এরপর, সমবেত কণ্ঠে একুশের গান গাওয়া হয়,

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, 

একুশে ফেব্রুয়ারী 

আমি কি ভুলিতে পারি।


 এই গানগুলো একুশের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করে। একুশের উৎযাপনের আরেকটি রীতি হল, শহীদদের কবর ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা। 

প্রথম শহীদ মিনারঃ প্রথম শহীদ মিনারটি তৈরি হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বার নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। মিনারটি ছিল ১০ ফুট উচু আর ৬ ফুট চওড়া। শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী মেডিক্যালের ছাত্রদের আবাসিক হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙে ফেলে। 

 ২১ শে ফেব্রুয়ারির, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি   

২১শে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কানাডার প্রবাসী বাঙালিরা ২১শে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৮ সালের ৯ই জানুয়ারি, আবদুস সালাম ও রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত “মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড” নামক সংগঠন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানকে একটি চিঠি লিখে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানায়।

কফি আনান তাদের ইউনেস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু ইউনেস্কোর শিক্ষা বিভাগ বেসরকারি উদ্যোগে কোনো প্রস্তাব গ্রহণের অপরাগতার করেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপিত হলে ২৭টি দেশ এ প্রস্তাবকে সমর্থন জানায়। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩১ তম সম্মেলনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই স্বীকৃতির ফলে ২১শে ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হয়ে ওঠে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিশ্বের সকল দেশের মাতৃ ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিনটি ভাষার অধিকার, ভাষার মর্যাদা ও গুরুত্ব নিয়ে আমাদের সচেতন করেন। পাশাপাশি ভাষার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্য রক্ষা এবং ভাষার মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব সমূহঃ  

১. ভাষার অধিকার রক্ষায় সহায়তা করেঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষের ভাষার অধিকার রক্ষার প্রতীক। এই দিবসটি পালনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে ভাষার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা হয়। এটি ভাষার মাধ্যমে যোগাযোগ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে।

২. ভাষার মর্যাদা ও গুরুত্ব তুলে ধরেঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাষার মর্যাদা ও গুরুত্বকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে। এই দিবসটি পালনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া হয় যে, ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি একটি জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ের বাহন।

৩. সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করেঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাষা বৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে।  

৪. শিক্ষা ও উন্নয়নে সহায়তা করেঃ মাতৃভাষায় শিক্ষা পেলে শিশুরা ভালো বুঝতে পারে, ফলে শিক্ষার মান উন্নত হয়।  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শিক্ষায় নিজ ভাষার গুরুত্বকে তুলে ধরে।

৫. সামাজিক ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধি: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে সামাজিক ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৬. মানবতাবাদী চেতনার বিকাশ: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মানবতাবাদী চেতনার বিকাশে সহায়তা করে। এই দিবসটি পালনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী ভাষার মাধ্যমে মানবতাবাদী চেতনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হয়।

বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক সাফল্য 

বাংলা ভাষা কেবলমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি ক্রমেই গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলা ভাষার সাফল্যের কিছু উদাহরণ হলো:

  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার: ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যা বাংলা ভাষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। এটি বিশ্বের মঞ্চে বাংলা ভাষার মর্যাদা ও স্বীকৃতি বাড়িয়েছে।
  • সিয়েরা লিওন: সিয়েরা লিওন সরকার বাংলাকে দেশের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি বাংলা ভাষার জন্য একটি বিশেষ অর্জন।
  • লন্ডন: ২০১৮ সালে লন্ডন বরো অধিদপ্তর বাংলাকে লন্ডনের দ্বিতীয় আনুষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাবনা দেয়। যদি এই প্রস্তাবনা গৃহীত হয়, তাহলে লন্ডন বিশ্বের প্রথম শহর হবে যেখানে বাংলাকে আনুষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে।
  • বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ভারতে বাংলা ভাষায় শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
  • প্রায় ২০টি দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ভাষা বিভাগ রয়েছে, যেখানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে পড়াশোনা করা যায়।
  • বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র, গান ও সাহিত্য জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
  • বাংলা ভাষা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী ভাষা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও বিশ্বজনীন উপলব্ধি

বিশ্বে প্রায় ৭,০০০ ভাষা প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২,৫০০ ভাষা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যে কোন সময় হারিয়ে যেতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কথ্য ভাষা হলো চীনা মান্দারিন ভাষা। এরপর রয়েছে হিন্দি, স্প্যানিশ, ইংরেজি ও আরবি ভাষা। বাংলা ভাষা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম কথ্য ভাষা। বিভিন্ন ভাষা ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য বহন করে। ভাষার মাধ্যমে এই বৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। চীন, জাপান, কোরিয়া ও স্পেন হলো বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ। এই দেশগুলোতে মাতৃভাষার প্রতি বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়।

এই দেশগুলোর মধ্যে একটা বড় মিল হল, এরা শিক্ষার ও অফিসিয়াল কাজে নিজেদের মাতৃভাষাকে প্রাধান্য দেয়। এই দেশগুলোর উদাহরণ থেকে দেখা যায় যে, মাতৃভাষার প্রতি আগ্রহ শুধুমাত্র ভাষার গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করে না। বরং এটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, শিক্ষার মান ও জাতিয়তাবোধ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাধ্যমে বিশ্ববাসী ভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দিবসের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ তাদের ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছে।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে একুশের চেতনা

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ছিল বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনা ছিল বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা। এই চেতনার মূলে ছিল একুশের ভাষা আন্দোলন। একুশের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি বুঝতে পেরেছিল যে, অধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়। এই লড়াইয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তার জাতীয়তাবোধ ও স্বাধিকার চেতনা জাগ্রত করেছিল। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় একুশের ভাষা আন্দোলনের চেতনা বাঙালি জাতির মধ্যে প্রবলভাবে জাগ্রত ছিল। এই চেতনা তাদের স্বাধিকার দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ করেছিল।

স্বাধীনতা যুদ্ধে একুশের চেতনা

স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের শোষণ ও বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। একুশের চেতনা স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল। একুশের চেতনা হলো ভাষার অধিকারের জন্য আত্মত্যাগের চেতনা। এই চেতনা বাঙালি জাতির মধ্যে স্বাধিকারের চেতনাকে আরও প্রবল করে তোলে। “একুশের চেতনা” ও “বাংলাদেশের স্বাধীনতা ” শব্দ দুটির অর্থবোধক মানে আলাদা হলেও একটির সাথে আরেকটির সর্ম্পক গভীর ভাবে জড়িত । একটি ছাড়া অন্যটি আমরা ভাবতে পারি না, পারাও সম্ভব নয়। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বঙ্গবন্ধু 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বাংলা ভাষায় ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বিশ্ব নেতাদের নিকট বাঙালি জাতীয়তাবাদ তুলে ধরেন।  একুশের চেতনা ধারন করে যে একটি জাতিকে স্বাধীনতা দেওয়া যায়, তার উদাহরন হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে তিনি সক্রিয় ছিলেন। এর জন্য তাকে গ্রেফতার হতে হয়েছিল।  ১৯৭১ সালের ২০-২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে ছাত্র-জনসমাবেশে স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন_

 “শহীদের আত্মা আজ বাংলার ঘরে ঘরে ফরিয়াদ করে ফিরছে, বাঙালি তুমি কাপুরুষ হয়ো না, স্বাধিকার আদায় করো। আমিও আজ এই শহীদ বেদী থেকে বাংলার জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, প্রস্তুত হও, দরকার হয় রক্ত দিব। নির্বাচনে আমরা বিপুল সাফল্য অর্জনের পরও বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আজো চলছে। যে ষড়যন্ত্রের পরিণতি এই ২১ ফেব্রুয়ারি, যে ষড়যন্ত্রের পরিণামে বাঙালিকে বারবার রক্ত দিতে হয়েছে, সে ষড়যন্ত্র আজো শেষ হয়নি।”

বঙ্গবন্ধু তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছেন, শুধেছেন শহীদের রক্তের ঋণ। তার যোগ্য নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রণিত সংবিধানে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের চেতনা।

ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অঙ্গীকার 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, এই দিনটিতে আমরা আমাদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি। 

ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অঙ্গীকার সমুহঃ 

  • আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে মর্যাদার সাথে ব্যবহার করব এবং এর বিকাশ ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করব।
  • আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, আমরা আমাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতিকে ধারণ ও প্রচার করব।
  • আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, আমরা অন্যান্য ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হব এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তুলতে কাজ করব।

এই মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রাখতে হলে আমাদের সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। একুশের চেতনা আমাদেরকে সেই শক্তি ও অনুপ্রেরণা দেবে ।

ভাষা আন্দোলন ও আমাদের শিল্প সাহিত্য

ভাষা আন্দোলন বাংলা সাহিত্যে এক নব দিগন্তের সূচনা করে। এই আন্দোলনের চেতনা ও মূল্যবোধকে ধারণ করে অনেক সাহিত্যকর্ম রচিত হয়েছিল। যার প্রভাব বাংলা কবিতা, গল্পে, নাটকে ও গানে দেখা যায়। একুশের প্রেরণার প্রথম কবিতাতি সীমান্ত পত্রিকার সম্পাদক মাহবুল উল আলম চৌধুরীর। ২১ শে ফেব্রুয়ারির দিনই লিখেছিলেন ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। এরপর কবি আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘স্মৃতিস্তম্ভ’, শামসুর রাহমানের ‘বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের ‘একুশের কবিতা’, আনিস চৌধুরীর ‘একুশের কবিতা’, এবং ফজলে লোহানী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান হাফিজুর রহমান সহ অনেকী অনেক কালজয়ী একুশের কবিতা লেখেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বিষয়ে লেখা হয়েছে ব্যাপক সংখ্যক প্রবন্ধ। অমর একুশের ওপর লেখা প্রথম উপন্যাস জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন’।   

বাদ ছিল না নাট্য ও থিয়েটারের অঙ্গন। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম বার্ষিকীতে মুনীর চৌধুরীর বিখ্যাত ‘কবর’ নাটক লেখা হয়। আরেক ভাষা সংগ্রামী  আসকার ইবনে শাইখ লিখেছিলেন আরেকটি নাটক ‘যাত্রী’। 

ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য অনেক দেশাত্মবোধক গান রচিত হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত ও আলতাফ মাহমুদ সুরারোপিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…’ এসব গানে আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মত্যাগের কথা উঠে আসে। 

নতুন প্রজন্ম ও মাতৃভাষার চর্চা

আজকের যুগ হলো প্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্ব এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। আমরা যেকোনো সময় যেকোনো তথ্য পাই হাতের বাটন কয়েক ক্লিকেই। এই প্রযুক্তির বিকাশের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে। এর মধ্যে একটি হলো মাতৃভাষার চর্চা। আজকের প্রজন্মের বেশিরভাগ মানুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষার ওয়েবসাইট, ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার, ইত্যাদি ব্যবহার করে। ফলে তারা ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, চীনা, জাপানি, ইত্যাদি ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এর ফলে তারা নিজস্ব মাতৃভাষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যিক আব্দুল হাকিম অনেক কঠিন ভাষায় লিখেছিলেন, 

যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।

সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।

নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়।।


এই প্রজন্মের অনেকেই মনে করে, মাতৃভাষা শুধুমাত্র কথা বলার জন্য। লেখার জন্য বা অন্যান্য কাজে ইংরেজিই ভালো। এছাড়াও, অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের ইংরেজি ভাষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেন। তারা চান তাদের সন্তানরা ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হোক। এই প্রভাবেও যুব সমাজের মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তাই নতুন প্রজন্মের উচিত মাতৃভাষার প্রতি আগ্রহী হওয়া। মাতৃভাষায় কথা বলার পাশাপাশি লেখালেখি করা উচিত। মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। 

মাতৃভাষার বিকৃতি ও অবজ্ঞা

দুঃখজনক সত্য, আমরা অনেকেই আজ নিজের মাতৃভাষার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছি। বাংলা ভাষার বিকৃতি ও অবজ্ঞা চোখে পড়ে, কিন্তু আমরা প্রতিকারের জন্য সচেতন নই।

একদিকে, আমাদের বিচার ব্যবস্থা এখনো ইংরেজির মোহে আকীর্ণ। আদালতের কাজকর্ম, রায় প্রকাশ – সবই চলে ইংরেজিতে। ফলে, সাধারণ মানুষের চোখে আইন হয়ে ওঠে দুর্ভেদ্য। ন্যায়ের ভাষা যখন জনগণের ভাষা হয় না, তখন ন্যায়ের মূল্যই কমে যায়।

অপরদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলা ভাষার বিকৃতি আরও ভয়াবহ। ইংরেজি শব্দ জড়িয়ে-বাংলিশ, বানাের ব্যাপারে উদাসীন, অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে যেন প্রতিযোগিতা চলে কে কত খারাপভাবে বাংলা লিখতে পারে। এই ভাষা-দূষণের লাইকে, শেয়ারে তালগোম মেলায় আমরাও, যেন নিজের মায়ের ভাষাকে অপমানিত করতেই মত্ত হয়ে আছি।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। বাংলা ভাষার প্রতি গর্ব বোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। সকল সরকারি পর্যায়ে আইন-আদালতের কাজকর্ম বাংলা ভাষায় চালু করা জরুরি। শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলা ভাষার শিক্ষাকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে, ভালো বাংলা লিখতে উৎসাহিত করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, ভাষা হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতির বাহন। বাংলা ভাষাকে অবহেলা করলে আমরা আসলে আমাদের নিজের গোড়াতেই আঘাত করছি। সময় এসেছে, জেগে ওঠার, নিজের ভাষাকে রক্ষা করার, নিজের গর্বকে ফিরিয়ে আনার।

উপসংহার 

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার সাফল্য ও মর্যাদা সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি আমাদের জাতির জন্য গৌরবের পাশাপাশি বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষের জন্যও এক অনুপ্রেরণা। একুশের চেতনা শুধুমাত্র বাংলা ভাষার জন্যই নয়, সকল ভাষার জন্যই প্রযোজ্য। এই চেতনা আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, প্রত্যেক মানুষেরই তার মাতৃভাষার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার রক্ষার জন্য আমরা সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা সকলেই প্রতিজ্ঞা হোক যে, আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে ভালোবাসব, এর চর্চা করব এবং এর বিকাশের জন্য কাজ করব। আমরা বিশ্বের সকল ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হব এবং সকল ভাষার বিকাশে সহায়তা করব।

COMMENTS

Loaded All Posts Not found any posts Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content