সূচনা
মুক্তিযুদ্ধ কি
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশ পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি দেশে বিভক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও কেবল ধর্মীয় সাদৃশ্যের অজুহাতে পাকিস্তানের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করতে থাকে। প্রথমেই তারা বাংলা ভাষার ওপর আঘাত হানে।
পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষ ১৯৫২ সালে রক্তের বিনিময়ে তা প্রতিহত করে। এরপর ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্ফুরণ ঘটায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে এবং ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে স্বাধীনতার পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে তােলে। যার চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে। উক্ত নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (Sheikh Mujibur Rahman) নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ Awami League নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু দখলদার শাসকগােষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। আলােচনার নামে কালক্ষেপণ করে তারা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে গােলা-বারুদ এনে মজুত করতে থাকে। এক পর্যায়ে ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। গভীর রাতে ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর চালায় ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। প্রতিবাদে এদেশের মানুষ জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে দুর্বার প্রতিরােধ গড়ে তােলে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
স্বাধীনতার ঘােষণা
অস্থায়ী সরকার গঠন
স্বাধীনতার ঘােষণা
২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞে সারা বাংলাদেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এমনি অবস্থায় গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীনতার ঘােষণা দেন তা ওয়ারলেসের মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ. হান্নান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করলে সারাদেশে ব্যাপক আলােড়ন সৃষ্টি হয়।
পূর্ব বাংলা রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হয়ে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করে, ফলে বিশ্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে জানতে পারে। ঘোষণাটি ছিল নিম্নরূপঃ
আমাদের মহান নেতা, বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। এটি আরও ঘোষণা করা হচ্ছে যে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একমাত্র নেতা হচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান। আমি সেই কারণে আমাদের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ে বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিশেষ করে বৃহৎ বিশ্ব ও প্রতিবেশীদের কাছে কার্যকারী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হামলার ফলে ভয়াবহ গণহত্যা শুরু হয়েছে। অধিকাংশ জনগণের বৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিপীড়নকারী, এটি একটি ক্রূর কৌতুক ও মিথ্যা অপবাদ যার কাউকে বোকা বানানো উচিত নয়। বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রধান পদক্ষেপগুলোর মধ্যে প্রথম হতে হবে নিরপেক্ষতা, দ্বিতীয় শান্তি এং তৃতীয় সকলের সাথে বন্ধুভাবপন্ন ও কারো সম্বন্ধে অজ্ঞানতা নয়। ─ আল্লাহ্ সহায় হোক, জয় বাংলা
মুক্তিবাহিনী গঠন ও যুদ্ধের প্রস্তুতি
পাক হানাদার বাহিনীর জ্বালাও-পােড়াও, অত্যাচার-নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে জীবন বাঁচাতে লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নেয়। এদের মধ্য থেকে কর্নেল (অবঃ) মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী M. A. G. Osmani একটি বিরাট গেরিলা বাহিনী ও নৌ-কমান্ডাে বাহিনী গঠন করেন। এর পাশাপাশি তিনি বিমান বাহিনী গঠন করেন। বিমান বাহিনী তাদের নিজস্ব বিমান নিয়েই ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও ঢাকায় প্রথম বিমান হামলা চালায়। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। এবং প্রত্যেক সেক্টরে একজন কমান্ডার নিযুক্ত করেন। এ কমান্ডারদের অধীনে মুক্তিবাহিনী হানাদারদের বিরুদ্ধে ইস্পাত কঠিন প্রতিরােধ গড়ে তোলে।
১নং সেক্টর
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফেনী নদী পর্যন্ত মেজর জিয়াউর রহমান (এপ্রিল – জুন) মেজর রফিকুল ইসলাম (জুন-ফেব্ৰুয়াৱী)
২নং সেক্টর
নোয়াখালী জেলা, কুমিল্লা জেলার আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত এবং ফরিদপুর ও ঢাকার অংশবিশেষ মেজর খালেদ মোশাররফ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) মেজর এ.টি.এম. হায়দার (সেপ্টেম্বর-ফেব্ৰুয়াৱী)
৩নং সেক্টর
সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা, কিশোরগঞ্জ মহকুমা, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে কুমিল্লা ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ মেজর কে.এম. শফিউল্লাহ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) মেজর এ.এন.এম. নুরুজ্জামান (সেপ্টেম্বর-ফেব্ৰুয়াৱী)
৪নং সেক্টর
সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই-শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট-ডাউকি সড়ক পর্যন্ত মেজর সি.আর. দত্ত।
৫নং সেক্টর
সিলেট-ডাউকি সড়ক থেকে সিলেট জেলার সমগ্র উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল মীর শওকত আলী
৬নং সেক্টর
সমগ্র রংপুর জেলা এবং দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা উইং কমান্ডার এম.কে. বাশার
৭নং সেক্টর
দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, বগুড়া, রাজশাহী এবং পাবনা জেলা মেজর কাজী নুরুজ্জামান
৮নং সেক্টর
সমগ্র কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা, ফরিদপুরের অধিকাংশ এলাকা এবং দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়কের উত্তরাংশ
- মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (এপ্রিল- আগস্ট)
- মেজর এম.এ. মনজুর (আগস্ট-ফেব্ৰুয়াৱী)
৯নং সেক্টর
দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনার দক্ষিণাঞ্চল এবং সমগ্র বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা
- মেজর এম.এ. জলিল (এপ্রিল-ডিসেম্বর প্রথমার্ধ)
- মেজর জয়নুল আবেদীন (ডিসেম্বরের অবশিষ্ট দিন)
১০নং সেক্টর
কোনো আঞ্চলিক সীমানা নেই। নৌবাহিনীর কমান্ডো দ্বারা গঠিত। শত্রুপক্ষের নৌযান ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো হত
১১নং সেক্টর
কিশোরগঞ্জ মহকুমা বাদে সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা এবং নগরবাড়ি-আরিচা থকে ফুলছড়ি-বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত যমুনা নদী ও তীর অঞ্চল
- মেজর জিয়াউর রহমান (জুন – অক্টোবর)
- মেজর আবু তাহের (অক্টোবর-নভেম্বর)
- স্কোয়ড্ৰণ লীডাৱ এম হামিদুল্লাহ খান (নভেম্বর-ফেব্ৰুয়াৱী)
মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ
পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ ও চুড়ান্ত বিজয়
বাংলাদেশের মানুষের বহু আকাঙ্ক্ষিত বিজয় ধরা দেয় যুদ্ধ শুরুর নয় মাস পর। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও সারা দেশে সকল পাকিস্তানি সৈন্যকে আত্মসমর্পণ করাতে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরের Bay of Bengal দক্ষিণতম প্রান্তে প্রবেশ করে। কিন্তু বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের দখল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
মুক্তিযুদ্ধে বৈদিশিক সাহায্য-সহযােগিতা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
উপসংহার
Tag: #বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রবন্ধ রচনা #বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনার পয়েন্ট #বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস pdf #বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রশ্ন #বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান #বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অনুচ্ছেদ #অনুচ্ছেদ রচনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ #মুক্তিযুদ্ধ কি #মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর #মুক্তিযুদ্ধের সারসংক্ষেপ
COMMENTS